পাহাড় এডভেঞ্চারে ব্যাকপ্যাকে আপনার কাছে যা থাকা উচিৎ

ব্যাকপ্যাকিং প্যাকিং লিস্ট

সিজনঃ গরম কাল (মার্চ থেকে জুলাই)

ক্যাম্পিং গিয়ার্সঃ

[১] ব্যাকপ্যাকঃ (৪০-৫০লিটার) পিঠের উপর ভালো মানের ব্যাকপ্যাক আরামদায়ক ট্রেকিং এর প্রথম শর্ত। এমন ব্যাগ নেয়া উচিৎ যেগুলার কোমর আর বুকে স্ট্র্যাপ আর পিছনে একটা শক্ত ফ্রেম আছে। এমন  ব্যাগের ওজন যতই হোক এটা নিয়ে ট্রেকিং করতে কষ্ট হবে না। সমস্ত ওজন সমান ভাবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যাবে। কোন এক দিকে ঝুলে পরবে না।

[২] ডে প্যাকঃ (২০-২৫ লিটার) বড় ব্যাগের সাথে একটা ছোট ব্যাগ থাকলে সবসময় কাজে দেয়। ক্যাম্প থেকে আশ-পাশের জায়গা রেকি করতে যাওয়া, একদিনের জন্য আশেপাশের কোথাও হুটহাট চলে যায়র জন্য কাপড়ের একটা হালকা ঝোলা ব্যাগ সবসময় আমার ব্যাগে থাকে।

[৩] ক. ট্রেকিং বুট- যে যেই ধরনের বুট/কেডস পরে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তবে ভালো গ্রিপের গোড়ালি পর্যন্ত প্রটেক্টেড আর্মি বুট ট্রেকিং এর জন্য ভালো। পাথরের উপর পিছলে গেলে পা মচকানোর চান্স কম থাকে।

    খ. স্যান্ডেল- ঝিড়ির পানিতে বুট ভিজে গেলে আমার অনেক বাজে লাগে। তাই বান্দরবানে ট্রেকিং এর জন্য আমি সবসময় ভালো গ্রিপের স্যান্ডেল ই ব্যবহার করি। তবে কেউ বুট নিয়ে গেলেও সাজেস্ট করব একটা হালকা দেখে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ট্রেকিং এর সময় ছাড়া ও ক্যাম্পের আশে পাশে ঘুরার জন্য আর টয়লেট জাওয়ার সময় একটা স্যান্ডেল লাগবেই।

[৪] ক. টেন্ট-  বান্দরবানের মোটামোটি সব জায়গাতেই পাড়া আছে। পাড়া গুলোতে থাকার ও সুব্যবস্থা আছে। তবে টেন্ট এ থাকার মজাই আলাদা।একটা ভালো জায়গা খুঁজে বের করা, জায়গা টা পরিষ্কার করা, টেন্ট পিচ করে ক্যাম্প সেট আপ করা- এটাই তো মজা।

     খ. গ্রাউন্ড শিট- টেন্টের চাইতে একটু বড় পলিথিন বা ওয়াটার প্রুফ কাপড়ের টুকরো। টেন্টের নিচে এটা ভিছিয়ে নিলে টেন্ট ময়লা হয়না, পানি ঢুকার চান্স কমে যায়। তা ছাড়া এটাকে যে কোন জায়গায় ভিছিয়ে যখন-তখন ল্যাটানো যায়।

[৫] স্লিপিং ব্যাগ- বান্দরবান বড়ই আজিব একটা জায়গা। গরমের সময়ে দিনের বেলা গা পুড়ে যাবে কিন্তু রাতের বেলা একটা সব সময় একটা ঝিড়ঝিড়ি ঠান্ডা ভাব থাকবে। ঝিড়ির পাশে ক্যাম্প করলে তো কথাই নাই। তাই রাতের বেলা আরামে ঘুমানোর জন্য হাল্কা স্লিপিং ব্যাগ অনেক কাজে দেয়। আর যদি কেউ স্লিপিং ব্যাগে স্বাচ্ছন্দবোধ না করে তাহলে পাতলা কুইল্ট (শীতবস্ত্র বিতরনী কম্বল) নিয়ে গেলেই হল। গুলিস্তানের ফুটপাতেই বিক্রি হয়। ১০০-১৫০টাকার মত দাম নিবে।

[৬] হেড ল্যাম্প/ টর্চ- ভালো মানের টর্চ লাইট ।

[৭] পলিব্যাগ- ব্যাগের সব কিছু যেন শুকনো থাকে তাই একটা বড় পলিথিন ব্যাগ।

[৮] স্লিপিং ম্যাট- অপশনাল। কেউ যদি একটু বেশি আরাম করে ঘুমাতে চায় আর কি।

[৯] হ্যামক- এটাও অপশনাল।

ক্যাম্পিং এর তৈজসপত্রঃ


[১] মগ- এলুমিনিয়ামের মগ (সিলভাবের মগ নামেই যা বেশি পরিচিত)। এটা একটা থাকলেই আর কিছু লাগে না। এক মগ দিয়েই পানি, চা, স্যুপ, ভাত, ন্যুডলস রান্না করা আর খাওয়া যায়।

[২] পেনি স্টোভ- ৫ গ্রাম ওজনের হালকা, সস্তা বিয়ার ক্যান দিয়ে নিজ হাতে তৈরি স্পিরিট স্টোভ। বান্দরবানের জন্য আদর্শ।

[৩] এক টাকার ছোট কয়েন- পেনি স্টোভের জন্য বঙ্গবন্ধুর ছাপ ওয়ালা এক টাকার কয়েন লাগবে।

[৪] মিথাইলেটেড স্পিরিট- পেনি স্টোভের জ্বালানি। দুই জনের টিমের ৪-৫ দিনের ট্রেকিং এর জন্য ২৫০ মিলি লিটার স্পিরিট যথেস্ট।

[৫] পানির বোতল- ৫০০ মিলি করে ২টা

[৬] মাল্টি টুলস- অনেক প্রয়োজনীয়

[৭] টেবিল চামচ- ওজন কমানোর জন্য শক্ত প্লাস্টিকের হলে ভালো হয়।

[৮] ময়লার ব্যাগ- ক্যাম্পিং এর ফলে যত ধরনের ময়লা হবে সব এই ব্যাগে ভরে নিয়ে নিজের সাথে নিয়ে আসার জন্য।

[৯] ম্যাচ/ ফায়ার স্টার্টার/ লাইটার

[১০] ছুরি

ক্যাম্পিং এর রেশনঃ

[১] চাল- পোলাউ এর চাল হলে ভাল হয়। পোলাও এর চাল তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। আমি শুধু মাত্র রাতে একবেলা ভরপেট ভাত খাওয়া সাজেস্ট করি। একবেলার জন্য ৮০-১০০ গ্রাম (প্রয়োজন মত)। এই হিসাবে ৫ দিনের জন্য এক জনের লাগে ৫০০ গ্রাম চাল।

[২] ডিম- চালের ভিতর ২/৩টা ডিম ঢুকিয়ে দিলেই আর ভাঙবে না।

[৩] শুটকি ( গরু, মুরগী, চিংড়ি)   ( প্রয়োজন মত)

[৪] পেঁয়াজ ( প্রয়োজন মত)

[৫] আলু ( প্রয়োজন মত)

[৬] মশলা ( প্রয়োজন মত)

[৭] লবন ( প্রয়োজন মত)

[৮] চা পাতা (প্রয়োজন মত)

[৯] চিনি (প্রয়োজন মত)

[১০] ডাল (প্রয়োজন মত)

[১১] সরিষার তেল (প্রয়োজন মত)

[১২] চকলেট, লজেন্স, আচার, খেঁজুর... ( প্রয়োজন মত)

ক্যাম্পিং এর জামা-কাপড়ঃ

[১] ট্রাউজার- ২টা। থ্রি ইন ওয়ান হলে ভালো হয়। যেগুলা কে চেইন খুলে ফুল থেকে থ্রি-কোয়ার্টার বা হাফ প্যান্ট বানিয়ে ফেলা যায়।

[২] টি-শার্ট- ২টা

[৩] মোজা- ২ জোড়া

[৪] মাথার ক্যাপ/ স্কার্ফ

[৫] পঞ্চো/ রেইন কোট- এই সময়ে সাধারনত বৃষ্টি হয় না। তবে বলা তো যায় না। তাই এইটাকে সব সময় সাথে রাখা টাই বুদ্ধিমানের কাজ।

[৬] আন্ডারওয়ার- ( প্রয়োজন মত)

[৭] গামছা- এইটা দিয়েই আমি মাথার ক্যাপ/স্কার্ফ আর শরীর মুছার কাজ করি।

[৮] সান গ্লাস

টয়লেট্রিজঃ

[১] টুথ পেস্ট ( মিনি প্যাক) টিমের মধ্যে একটা থাকলেই চলবে।

[২] টুথ ব্রাশ

[৩] ছোট সাবান

[৪] টয়লেট টিস্যু

[৫] মশা তাড়ানি ক্রিম (ওডোমস)

[৬] পেট্রোলিয়াম জেলি

ন্যাভিগেশনঃ

[১] ম্যাপ

[২] কম্পাস

[৩] জিপিএস

ইমার্জেন্সি কিটঃ

[১] সুঁই-সুতাঃ এটা অনেক দরকারি জিনিস। হেলাফেলা করবেন না।

[২] সেফটি পিন

[৩] সারভাইভাল কিট

[৪] ২০ ফিটের মত চিকন আর শক্ত দড়ি

ঔষধ-পত্রঃ

     এন্টি ম্যালেরিয়াল প্রফাইলেক্সিসঃ বান্দরবান ম্যালেরিয়ার জন্য বিখ্যাত। গত কয়েক বছরে আমার বন্ধুদের মধ্যে ৪-৫জন বান্দরবানে গিয়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে। তাই বান্দরবান যাওয়ার আগে অবশ্যই কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ম্যালেরিয়ার প্রফাইল্যাক্সিস ঔষধ গুলো খেয়ে যাবেন। সাধারনত ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকে তে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে ঔষধ খাওয়া শুরু করতে হয়।

নিচে কয়েকটি প্রয়োজনীয় ঔষধের নাম দিয়ে দিলাম।

[১] প্যারাসিটামল- জ্বর, হাত-পা ব্যাথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করার জন্য।

[২] এসিক্লোফেনাক – পেইন কিলার। ব্যাথা যখন বেশি হবে। ব্যাথা কম হলে প্যারাসিটামল খেলেই চলবে।

[৩] ওমেপ্রাজল- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আর পেইন কিলার খাওয়ার আগে অবশ্যই এটা খেতে হবে।

[৪] ডি- লোরাটিডিন – এন্টি-হিস্টামিন। সর্দি আর এলার্জির জন্য।

[৫] মেট্রোনিডাজল- আমাশয় এর জন্য।

[৬] টলপেরিসন হাইড্রোক্লোরাইড- মাসল পেইন এর জন্য।

** খাবার স্যালাইন- অন্য কোন ঔষধ লাগুক চাই না লাগুক, এই গরমের মধ্যে এটা লাগবেই। শরীরে পানি শূন্যতা যেন না হয় তাই ঘন ঘন পানি খাবেন। ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রচুর লবন ও বেড়িয়ে যায় তাই কাজে দিবেই। প্রতিদিনের জন্য ৩-৪ প্যাকেট ও.আর.এস সাথে নিয়ে যাবেন।

[ যে কোন ঔষধ খাওয়ার আগে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন]


    আমি এখানে যা যা ব্যবহার না করলেই না বা ব্যবহার করলে ট্রেকিং আর ক্যাম্পিং আরামদায়ক হবে শুধু মাত্র সেগুলাই উল্লেখ করেছি। এ ছাড়া ও আরও অনেক কিছু আছে যা আপনার প্রয়োজনীতা অনুযায়ি লিস্টে থাকতে পারে। যেমনঃ সানস্ক্রিন, দূরবিন, ঘড়ি ইত্যাদি।

এই মুহুর্তে আর কিছু মনে পরছে না। মনে পরলে পরে আপডেট করে দিব।
কিপ ট্রাভেলিং, স্টার্ট ব্যাকপ্যাকিং !

Where To Buy These Things ? Click Here
1 comment :

1 comment :