সাজেক ভ্যালী বান্দরবন

সাজেক ভ্যালী : প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের আঁধার আমাদের মাতৃভূমি রূপসী বাংলা । রূপের অপার সৌন্দর্য্যের সাঁজে সেজে আছে বাংলা মা । আমরা সৌন্দর্য্যের খোঁজে ছুটে বেড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি আমাদের দেশের সৌন্দর্য তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । আমরা বিভিন্ন দেশের গ্রীন ভ্যালী দেখতে যাই কিন্তু ঢাকা থেকে মাত্র ৭/৮ ঘণ্টা গাড়ি পথে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সাজেক ভ্যালী টা আমরা কজনই বা দেখেছি । হাতে দুই দিন সময় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন এ সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য, যা আপনার সুন্দর একটি স্মৃতি হয়ে কল্পনায় গেঁথে থাকবে ।  সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত । সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে । রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায় । খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার । বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার । খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয় । পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে । তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে । পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার । বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । রুইলুই পাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প । এখানে হেলিপ্যাড আছে । সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে ।সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর  কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে  যাওয়ার অনুমতি দেয় না । ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা , দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । একদিনে এই সব গুলো দেখতে হলে যত তারাতারি সম্ভব বেড়িয়ে পড়বেন । খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরায় ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেন না ।খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫০০০-৬০০০ টাকা । এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন । লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে । অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন । বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন । ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে । তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন । Tourist Guide Of Bangladesh

সিস্টেম রেস্তোরাঃ খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় এই ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেস্তোরার অবস্থান । এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন । যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬৩৪ , ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩ , ০১৭৩২৯০৬৩২২ ।

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা । শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা । এছাড়া BRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় । যোগাযোগঃ সেন্টমার্টিন্স পরিবহন - আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ ।শ্যামলী পরিবহন - আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫ । আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া (চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯ । শান্তি পরিবহন- ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির ভাড়া ৫২০ টাকা, দিঘিনালা ৫৮০ টাকা, পানছড়ি ৫৮০ টাকা, মেরুন ৬০০ টাকা, মাইনী ও মারিস্যা ৬৫০ টাকা। সায়দাবাদ থেকে সকাল ৮ টায় একটি গাড়ি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রাত ১০ টা থেকে ১১.১৫ পর্যন্ত চারটি গাড়ি যায়। রাত ১০ টার গাড়ি পানছড়ি যায়। রাত ১০.৪৫ এর গাড়ি মাইনী। রাত ১১.১৫ গাড়ি মারিস্যা যায়। সব গুলো গাড়িই সায়দাবাদের সময়ের ১ ঘন্টা আগে গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। সায়দাবাদ (ঢাকা)- ০১১৯১২১৩৪৩৮।আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ । চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসি বাস  কদমতলী(চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫ । খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।

কোথায় থাকবেনঃ খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে । দীঘিনালায় কয়েকটি হোটেল থাকলেও দীঘিনালা গেস্ট হাউজের মান কিছুটা ভালো ।

খাগড়াছড়ি:

পর্যটন মোটেলঃ এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেই পরবে । মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার । ভাড়াঃ এসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা । মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে । যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫ ।

গিরি থেবার : এটি খাগড়াছড়ি শহরের কাছে খাগড়াছড়ি ক্যন্টনমেন্টের ভিতরে অবস্থিত। এখানে সিভিল ব্যক্তিরাও থাকতে পারে। সব রুমই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। যার মধ্যে ২ টি ভি আই পি রুম, প্রতিটির ভাড়া ৩০৫০ টাকা। ডাবল রুম ভাড়া ২০৫০ টাকা। একটি সিংগেল রুম যার ভাড়া ১২০০ টাকা। যোগাযোগ : কর্পোরেল রায়হান- ০১৮৫৯০২৫৬৯৪।

হোটেল ইকো ছড়ি ইনঃ খাগড়াপুর ক্যান্টর্মেন্ট এর পাশে পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত । এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল । যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬২৫ , ৩৭৪৩২২৫ ।

হোটেল শৈল সুবর্নঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬ , ০১১৯০৭৭৬৮১২ ।

হোটেল জেরিনঃ ০৩৭১-৬১০৭১ ।

হোটেল লবিয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০ , ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬ , ০১১৯৯২৪৪৭৩০ ।

হোটেল শিল্পীঃ ০৩৭১-৬১৭৯৫ ।

রুইলুই পাড়া / সাজেক :

সাজেক রিসোর্ট : এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যা সাজেকে অবস্থিত। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।

রুন্ময় : এটি সাজেকে অবস্থিত। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।

আলো রিসোর্ট : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে) । যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি । প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা । যোগাযোগ : পলাশ চাকমা - ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।

রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই - ০১৮৩৮৪৯৭৬১২। লক্ষন - ০১৮৬০১০৩৪০২।

দীঘিনালা:
দীঘিনালা গেস্টহাউজঃ এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে অবস্থিত । এটি দীঘিনালার আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে একটু মানসম্মত । এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম নিয়ে থাকা যাবে । ট্রাভেলার হিসেবে এই গেস্ট হাউজে প্রথম আমি ও আমার "বাংলার ট্রেকার" গ্রুপ থাকি এবং অনেককে পাঠানোর কারনে আমার রেফারেন্স দিলে কিছুটা সুবিধা পাবেন । নূর মোহাম্মদ(ম্যানেজার) - ০১৮২৭৪৬৮৩৭৭ , কনক চাকমা : ০১৫৫৬৭০৩৮১৩।

শাহজাহান হোটেলঃ হোটেলটি  দীঘিনালা বাজারেই । ০১৮২৫৯৮০৮৬৭  (ম্যানেজার ) ০১৭৩২৫৭৩৬১৫ (মালিক )

দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার সুনীল দাদা- ০১৫৫৬৭৭১৮৬৮, রাজ - ০১৮২০৭৪১৬৬২, ০১৮৪৯৮৭৮৬৪৯ । শিবু- ০১৮২০৭৪৬৭৪৪ । সাজেক যেতে গাইডের তেমন দরকার নেই । তবুও প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন । আজম (গাইড , দীঘিনালা) - ০১৫৫৭৩৪৬৪৪২,  ০১৭৩৭৪৪২২৭২ । ড্রাইভার ও গাইডকে আমার রেফারেন্স দিয়ে কথা বললে সাজেক সহ খাগড়াছড়ির সব জায়গায় ওদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারবেন বলে আশা করছি ।
Writer: Nijam Vai
No comments :

No comments :

Post a Comment