জেনে নিন অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে

প্রশান্ত মহাসাগরভারত মহাসাগরের মাঝখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্র ও দ্বীপমহাদেশ অস্ট্রেলিয়া অবস্থিত। এই দেশটিতে প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। দৃষ্টি নন্দন আধুনিক ভাস্কর্য ও সুউচ্চ অট্টালিকা, উন্মুক্ত সমুদ্র সৈকত, আদিবাসী মানুষের প্রথাগত জীবনধারার প্রকাশ ইত্যাদি এমন অনেক কিছুই আছে যার কারণে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। দ্য ইকোনমিস্ট প্রতিবছর বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করে থাকে, সেই তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার চারটি শহর সেরা দশের মধ্যে আছে। আসুন তাহলে জেনে নিই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সেরা স্থানগুলো সম্পর্কে।

১। সিডনি
সিডনি শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এটি নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী এবং একটি আধুনিক শহর, যার আছে লম্বা ইতিহাস। এই অঞ্চলের প্রথম অধিবাসীরা হাজার হাজার বছর পূর্বে এই উপকূলে বাস করতো। ১৭৮০ সালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পাঠানো হত এই উপকূলে। বর্তমানে ফেরীতে করে সমুদ্র ভ্রমণের জন্য দর্শনার্থীদের ঘোরানো হয় সিডনি হারবার ব্রিজ এবং আইকনিক সিডনি অপেরা হাউজ।

২। গ্রেট বেরিয়ার রিফ
অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় শহর কুইন্সল্যান্ডের কোরাল সাগরে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অবস্থিত। যা ২,৯০০টির বেশি প্রবাল প্রাচীর এবং শত শত দ্বীপ নিয়ে গঠিত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ জীবন্ত প্রাণী একত্র হয়ে বিশাল প্রবাল প্রাচীর গঠিত হয়েছে যা পৃথিবীর সবচাইতে বিচিত্র বাস্তুতন্ত্রের একটি এবং অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম।

৩। অ্যালিস স্প্রিংস
অ্যালিস স্প্রিংস অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত এবং কাছাকাছি শহর থেকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অ্যালিস স্প্রিংসে গুহা, গিরিসঙ্কট, সীমানাহীন মরুভূমি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেখা মিলে। এখানে অনেক জনবিরল ও দর্শনীয় স্থান আছে এবং পর্বত আরোহণের সুযোগ আছে যেমন- উলুরো/আয়ারস পর্বত, কাটা টিজুটা ও কিং ক্যানিয়ন। আশির দশকে পর্যটকের আনাগোনা বেশি হওয়ার ফলে এখানকার জনসংখ্যা ২৮০০০ এ উন্নিত হয়।

৩। কেয়ার্ন্স(Cairns)
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, স্বাচ্ছন্দ্যকর আবহাওয়া এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে মোটামুটি কাছে হওয়ায় Cairns অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অবকাশ যাপনস্থল যা অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব কোণে অবস্থিত। Cairns প্রাদেশিক হলেও স্টাইলিশ শহর, এর জনসংখ্যা ১৫০,০০০। পর্যটকদের জন্য চমৎকার উপকূলীয় পরিবেশ এবং বিচিত্র বন্যপ্রাণীর দেখা মিলে এখানে।

৪। মেলবোর্ন
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর হচ্ছে মেলবোর্ন যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। মেলবোর্ন শহর পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর। মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই শহরের শপিং সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, স্পোর্টস ভেনু সব কিছুই পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। ভ্রমণ বিলাসী মানুষের জন্য মেলবোর্ন আদর্শ স্থান।

৫। ক্যানবেরা
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী হচ্ছে ক্যানবেরা। সব দেশের এম্বেসি কিংবা হাইকমিশন এখানে অবস্থিত। ক্যানবেরায় ক্যাঙ্গারু দেখা নিয়ে জনপ্রিয় লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর কিছু উক্তি স্মরণ করা যায়। তিনি বলেছেন- “আমেরিকা গেলে মানুষ যেমন নায়াগ্রা ফলস না দেখে ফিরে না তেমনি অস্ট্রেলিয়ায় গেলে ক্যাঙ্গারু না দেখে ফিরে না”। তিনি আরো বলেন-“সেখানে (ক্যানবেরা) পথের দুইপাশে অসংখ্য ক্যাঙ্গারু। ক্যাঙ্গারুর চলাফেরা খুব মজার, তাদের মত লেজে ভর দিয়ে জোড়া পায়ে লাফিয়ে আর কোন প্রাণী ছুটতে পারেনা। তার চেয়েও মজার হচ্ছে, মায়ের পেটের থলেতে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চার বসে থাকা। বাচ্চা গুলোকে দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে বুঝি এর থেকে আরামের কোন জায়গা নেই”।

এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড, পার্থ, ব্রিসবেন, ডারউইন, হোবারট এই শহর গুলোতেও ঘুরার অনেক জায়গা আছে।
No comments :

No comments :

Post a Comment